চট্টগ্রাম জেলার মীরসরাই থানার শ্রদ্ধেয় আলেমে দ্বীন ওলিয়ে কামেল হযরত মাওলানা জালাল উদ্দিন আহমদ রাহমাতুল্লাহি আলাইহি এর পূর্ণ এখলাছে প্রতিষ্টিত আল জামিয়াতুল আরাবিয়া কাসেমুল উলুম কাজির হাট মাদ্রাসা ও এতিমখানা। দেশের প্রাচীনতম দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আকিদা বিশ্বাসে অটল থেকে দ্বীনি শিক্ষা বিস্তার, দ্বীনের হিফাযত ও প্রচার প্রসার, শিরক-বিদআত জঙ্গী ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মূলোৎপাটন এবং আদর্শ নাগরিক তৈরীর প্রত্যয় নিয়ে ১৯৫১ ইং সালে গড়ে ওঠা এ জামিয়া নানা ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে বর্তমানে ৭১ বছর অতিক্রম করে চলছে। প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকেই জামিয়া তার মহান লক্ষ্য অর্জনে সুখ্যাতি ও কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখে চলছে দেশ-বিদেশে।
জামিয়া উত্তরোত্তর উন্নতি অগ্রগতি ও সুনাম অর্জন বিজ্ঞ শিক্ষকমণ্ডলীর অক্লান্ত পরিশ্রম এবং দেশ-বিদেশের দ্বীনদার দানশীল ভাই-বোনদের সার্বিক সহযোগিতা বিশেষভাবে স্মরণীয়। সর্বোপরি মহান রব্বুল আলামীনের ফজল ও করমই জামিয়ার চলার পথের প্রধান পাথেয়।
বর্তমান প্রতিষ্ঠানকে আরও উন্নতির দিকে অগ্রসর করতঃ মুমিন মুসলিম সমাজকে তাগুতি শক্তির বিষাক্ত ছোবল থেকে রক্ষা করার চিন্তা ধারা এবং বিশাল পরিকল্পনা নিয়ে আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করছি। প্রতিটি দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধান লক্ষ্য উদ্দেশ্য হচ্ছে শিক্ষার সুষ্ঠু ব্যবস্থা করা। আমরা শিক্ষার সুষ্ঠু ব্যবস্থা মান উন্নয়নের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। ইনশাআল্লাহ….
গরীব এতিম মেধাবী ছাত্রদের জন্য থাকা খাওয়া ও প্রয়োজনীয় আসবাব পত্রের এখানে সুব্যবস্থা রয়েছে। প্রকাশ থাকে যে, অত্র মাদ্রাসার স্থায়ী কোনো আয়ের উৎস নেই। মহান আল্লাহ তায়ালার উপর পূর্ণ আস্থা বিশ্বাস ও তাওয়াক্কুল আলাল্লাহ অতঃপর ধর্মপ্রাণ মুসলিম ভাই-বোনদের সাহায্য-সহযোগিতা তথা এককালীন চাঁদা মৌসুমি ধান্য চাদা, ছদকা, যাকাত, ফিতরা, কোরবানির চামড়া, নজর কাফফারা প্রভৃতি দ্বারা অত্র মাদ্রাসা পরিচালিত হয়।
অতএব ধর্মপ্রাণ সকল ভাই-বোনদের খেদমতে উক্ত মাদ্রাসার বহুমুখী কার্যক্রম বাস্তবায়নে এগিয়ে আসার জন্য সবিনয় অনুরোধ জানাচ্ছি।
আল জামিয়াতুল আরাবিয়া কাসেমুল উলুম কাজিরহাট মাদ্রাসা ও এতিমখান মাদ্রাসা পরিচিতি
“কওমি মাদ্রাসা কি ও কেন” কওমি শিক্ষার পরিচয়।
কওমি মাদ্রাসা কি ও কেন…?
কওমি মাদ্রাসা সঠিক সম্ভাবনা ও প্রদীপ্ত আশার আলো, পৃথিবীর বুকে যুগ পরম্পরায় যে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে সেগুলোর মাঝে অন্যতম এবং সর্বোত্তম হলো কওমি মাদ্রাসা।যার নির্মাতা এবং প্রতিষ্ঠাতা হলেন আল্লাহ রব্বুল আলামীনের পক্ষ থেকে প্রেরিত মানতার মহান অগ্রদূত হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। যার অমীয় সুধা পান করে তৃপ্ত হয়েছেন হযরত আব্বাস রাযিআল্লাহু তা’আলা আনহু, হযরত ইবনে মাসউদ রাযিআল্লাহু তা’আলা আনহু, হযরত আবু হোরায়রা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু। সৃষ্টি হয়েছে হযরত ইমাম আবু হানিফা, ইমাম মালেক, ইমাম শাফেয়ী, ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রাহিমাহুল্লাহ আলাইহিম প্রমুখ আইম্মায়ে কেরাম। কওমি মাদ্রাসার প্রকৃত আদর্শ হলো মানব তৈরীর সুনিপন কারখানা। যে কারখানা থেকে তৈরি হয়েছেন হযরত ইমাম গাজ্জালী, মুহাদ্দেসে দেহলবী, মুহাজিরে মক্কী, রাহিমাহুল্লাহ আলাইহিম এর মত বিখ্যাত মনীষীগণ।যারা জাতির ক্রান্তিলগ্নে ইংরেজ বেনিয়াদের হাত থেকে ধর্ম দেশ ও জাতিকে বাঁচাতে গড়ে তুলে “দারুল উলুম দেওবন্দ” মাদ্রাসা এবং দারুল উলুম দেওবনকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে হাজার হাজার কওমি মাদ্রাসা। দেশ ও ধর্ম প্রিয় আলেমগনের রোনাজারি আহাজারি ও নিঃস্বার্থ আত্মত্যাগ এবং নিরলস সাধনা প্রচেষ্টায় তৈরি হয় সেবা প্রীয় একদল ছাত্র সমাজ মহান আত্মত্যাগ ও বিপ্লবী হুংকারে কেঁপে উঠেছে ব্রিটিশ বেনিয়াদের মসনদ।ছাড়তে বাধ্য হয়েছে উপমহাদেশ। তাদের তাজা খুনের প্লাবন স্রোতে তৈরি ভেসেছে উনিশ শত সাতচল্লিশ সালের স্বাধীনতা। যে তরীর কান্ডারী ছিলেন হযরত কাসেম নানুতুবী, হুসাইন আহমদ মাদানী, শাহ ইসমাইল শহীদ রহিমাহুল্লাহ সহ অসংখ্য দেওবন্দী ওলামায়ে কেরাম। ধর্মের প্রকৃত রূপায়ণ, সঠিক সংরক্ষণ, সকল প্রকার অপব্যাখ্যা ও মন গড়া ধর্ম ব্যবস্থা পত্র থেকে কোরআন ও হাদিস ইলমে নববীর মূলধারা সুন্নাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর রূপরেখা সংরক্ষিত হচ্ছে সুপ্রাচীর কওমি দুর্ঘে।
কওমি মাদ্রাসা জাতিকে শুধু স্বাধীনতাই উপহার দেয়নি বরং প্রতিবছর উপহার দেয় স্বার্থত্যাগী একদল কর্মামিস্ট।যারা প্রিয় মাতৃভূমিকে সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসী শক্তির আগ্রাসন থেকে রক্ষার দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।যারা স্বাধীনতার সর্বভৌমত্ত রক্ষার অতন্ত্র প্রহরীর দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত।
“কওমি শিক্ষার পরিচয়”
কওমী শিক্ষার্থীদের পরিচয় হলো আল্লাহ তায়ালার প্রতি পূর্ণ অনুগত ও আস্থাশীল, সুন্নাতে নববীর উপর পূর্ণ অনুরক্ত অনুসারী। এই শিক্ষা ব্যবস্থা মানব ব্যবস্থা প্রদত্ত নয় বরং আল্লাহ প্রদত্ত। যার আবেদন করেছিলেন জাতির পিতা হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম সন্তানের ইহলৌকিক এবং পারঅলৌকিক সুখ শান্তি এবং উন্নতি ও সমৃদ্ধির কথা ভেবে। আর পার্থিব সেই শিক্ষা ব্যবস্থার পাঠ্য সূচি ছিল কুরআনের তেলাওয়াত, চরিত্র সংশোধন তথা আত্মশুদ্ধি এবং কিতাব ও হিকমতের শিক্ষা দান। আল্লাহ তাআলা এই প্রার্থনা কবুল করলেন, শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এই পাঠ্য সূচি দিয়ে প্রেরণ করলেন এই পৃথিবীর বুকে। এরপর শারে চৌদ্দশত বছরের দীর্ঘ পথ অতিক্রম করার পর যুগ পরম্পরায় এই শিক্ষাব্যবস্থা আমাদের পর্যন্ত পৌঁছে দেন সাহাবায়ে কেরাম, তাবে তাবেঈন,এবং সালফে সালেহীন,রিযওয়ানিল্লাহি আলাইহিম আজমাইন। সুতরাং বিজ্ঞানের সামনে অজ্ঞান হয়ে যারা কওমি মাদ্রাসা সম্পর্কে বিজ্ঞান প্রযুক্তিতে পিছিয়ে থাকার অবান্তর অভিযোগ তোলেন তারা মূলত এই শিক্ষা ব্যবস্থা লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে অনবগত।
বস্তুত এই শিক্ষা আহরণ করে এবং নববী আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে কওমি শিক্ষার্থীরা হয় ভদ্র, সভ্য,নম্র, বিনয়ী, এবং মানবিক উন্নত চরিত্রাবলী অধিকারী। ফলে কওমি শিক্ষার্থীরা ধর্মকে বিসর্জন দিয়ে পশ্চাত্যের অন্ধ অনুকরণ করে না। সংস্কৃতির নামে অপসংস্কৃতির বেড়াজালে গা ভাসিয়ে দেন না এবং আকাশ মিডিয়া এবং প্রিন্ট মিডিয়ার নোংরামি, বেহায়াপনা, নগ্নতা ও অশ্লীলতায় নিমগ্ন হন না। কওমি শিক্ষার্থীরা অল্পে তুষ্ট, পর কল্যাণে সচেষ্ট, দশ ও দেশের জন্য উৎসর্গিত এবং উম্মত ও জাতির জন্য দরদ, মায়া এবং সম্প্রীতি ও ভালোবাসা প্রদর্শনের এক অনুপম দৃষ্টান্ত। তাই অভাব-অনটন ও ক্ষুধা, অনাহারে ক্লিষ্ট থাকা সত্বেও কওমি শিক্ষার্থীরা লোভ লালসা, সন্ত্রাস, হানাহানি, চাঁদাবাজি ও দুর্নীতির কালো বাজার থেকে তারা অনেক দূরে বহুদূরে নিরাপদ স্থানে অবস্থান করেন
আমরা ও আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস পশ্চাত্বমুখী আধুনিক শিক্ষায় গর্বিত দেশের বাইরের ও দেশের বাইরের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ গুলো এর একটি উপমা পেশ করতেও সক্ষম হবে না। কওমি শিক্ষার্থীরা তাদের হৃদয়ের গহীনে এই বিশ্বাস লালন করে যে অর্থ-সম্পদ যশ-খ্যাতি, এবং ভোগ ও প্রাচুর্যের মধ্যে কোন কামিয়াবি ও সফলতা নেই বরং সততা ও নেয় নীতি এবং বিশ্বস্ততা ও আমানতদারীর ভিত্তিতেই জীবনে সফলতার সৌধ নির্মিত হয়। তাই দেশ ও জাতির আমানতের খিয়ানত, দুর্নীতি ও ইয়াবা কেলেঙ্কারির দায় থেকে কওমি শিক্ষার্থীরা মুক্ত ও পবিত্র। ন্যায় ও ইনসাফের কষ্টিপাথরে যাচাই করলে আমরা দেখতে পাই প্রতিটি কওমি মাদ্রাসা দ্বীন ও ইসলামের এক একটি উজ্জ্বল প্রদীপ। স্বাধীনতার স্বপক্ষে সৈনিক তৈরি করার আদর্শ প্রতিষ্ঠান এবং দেশ প্রেমিক সুনাগরিক সৃষ্টির নির্মল ঝর্ণাধারা। এখানে বিরাজ করে পারস্পারিক কলহ বিবাদ মুক্ত এক অন্তরঙ্গ পরিবেশে। দূষিত রাজনীতির পঙ্কিলতা ও ছাত্র রাজনীতির বিষাক্ততা এখানে নেই।
“কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা ও প্রসঙ্গ কর্মস্থান”
দ্বীনি শিক্ষার মারকাজ এই কওমি মাদরাসাগুলোকে আজ বাংলাদেশের কোন কোন সমালোচক ভুলবশত অসত্য বিশেষনে বিশেষায়িত করতে চান । তারা গুলোকে অপ্রয়োজনীয়’ বেকার, ও বেকারত্ব সৃষ্টিকারী ইত্যাকার কটু বাক্য কালিমা লেপন করে এগুলোর ভাবগাম্ভীর্য বিনষ্ট করতে সচেষ্ট। তারা ইনিয়ে বিনিয়ে টেনে টোনে জোড়াতালি দিয়ে বুঝাতে চান যে, এসব মাদ্রাসায় পড়ে কোন চাকরি বাকরি পাওয়া যায় না। ইচ্ছে মত টাকা পয়সা কামাই করা যায়না । বিলাসী জীবন উপভোগ করা যায় না। তাহলে এই সব প্রতিষ্ঠান নিয়ে সমাজের কি লাভ। এই সব বুদ্ধিজীবী ভাইদের উদ্দেশ্যে আমরা কিছু আরজ করতে চাই তারা যদি বুদ্ধির সদ্ব্যবহার করেন নিম্নোক্ত কথাগুলো একটু চিন্তা ভাবনা করেন তাহলে আশা করি তারা তাদের উপরোক্ত অবস্থান থেকে সরে আসবেন। স্কুল ,কলেজ , ইউনিভার্সিটি নির্বিশেষে পৃথিবীর কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই নিছক রুজি রোজগার ও আর্থিক উন্নতিকে সাধনকে নিজেদের শিক্ষা ব্যবস্থার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বলে ঘোষণা দেয়নি এবং দিতেও পারে না। বরং ছাত্রদের জ্ঞান ও প্রতিভার উপযুক্ত সাধনই সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এক অভিন্ন উদ্দেশ্যে তাহলে কওমি মাদ্রাসায় শিক্ষাপ্রাপ্ত কোন আলেমকে এ
মানদণ্ডে কেন বিচার করা হয় যে, তিনি তার লেখাপড়ার ধারা মাসে কত টাকা রোজগার করতে পারেন এটা আমাদের বোধগম্য নয়। চোখে রঙিন চশমা লাগিয়ে তাকালেই সবকিছুই সঠিক রং অনুমান করা যায় না চশমা খুলে তাকালে তবেই আসল রং চেনা যায়। যেসব বন্ধুগণ কওমি শিক্ষিতদের কে বেকার ও অকম্য দোষে দোষী করতে চান, যদি তারা তাদের চোখ থেকে রঙিন চশমা টি সরিয়ে তাকাতেন তাহলে দেখতে পেতেন যে, কওমি আলেম গন বেকারই নন বরং অনেক বেশি ব্যস্ত। মানুষকে সঠিক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ প্রদান করে নৈতিকতা ও আদর্শের গুণ অর্জনের প্রতি উৎসাহিত করা এবং তাদেরকে আখেরাতমুখী বানানোর মতো ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ কাজে তারা সদা নিয়োজিত। আমাদের অনেক আলেমেদ্বীন রয়েছেন যাদের ডায়েরিতে বিপুল পরিমান কাজের দীর্ঘ ফিরিস্তি পরে রয়েছে। কিন্তু সময়ের অভাবে তারা তাতে হাত দিতে পারছে না